নারী নেতৃত্ব হারাম ও অনুসারীরা তাগুত

নারী নেতৃত্ব হারাম ও অনুসারীরা তাগুত

লেখক:- মাওলানা সাইফুদ্দিন মানিক 

কুরআন ভিত্তিক দলিলঃ

কুরআনে বলা হয়েছে,
“পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল।
এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।”
সুরা নিসাঃ৩৪।

আরও বলা হয়েছেঃ
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।”
আহযাবঃ৩৩।

এ আয়াতগুলোর দ্বারা এটি প্রমাণ করে যে, পুরুষেরা সর্বদা নারীর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
তাই তারা কোন অবস্থাতে নারী-পুরুষ সকলের উপর নেতৃত্ব দিতে পারবে না।

এই আয়াতের পরিপ্রক্ষিতে মুফাসসিরীনগণ ব্যখ্যা দিয়েছেন,
১. নারীরা শাসক হতে পারে না।
২. নারীরা নবী বা রাসূল হতে পারে না।
৩. নারীগণ ইমামতি করতে পারবে না।
৪. নারীদের উপর জিহাদ ফরয নয়।
৫. নারীদের ব্যাপারে কিসাসের রায় দেওয়া জায়েয নয়।
৬. নারীদের জন্য জিহাদ ফরয নয়।
৭. তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ শুধুমাত্র নারীদের উপর নির্ভর করে না।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর,রুহুল মাআনী,বায়যাবী)

হাদীস ভিত্তিক দলীলঃ

বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে নারী নেতৃত্ব হারাম।
যেমনঃ বুখারী শরীফের কিতাবুল ফিকানে বলা হয়েছে যে,
“যে জাতির নেতৃত্ব কোন নারী দিবে সে জাতি কখনও কল্যাণ বয়ে আনবে না।”

অন্যত্র বলা হয়েছে,
“যখন নারীরা নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করবে তখন মাটির উপরের চেয়ে নীচের অংশ ভাল হবে।”
(তিরমযীঃকিতাবুল ফিকান)

তিরমিযী শরীফে আরেকটি হাদীস রয়েছে,
“পুরুষেরা তখন ধংস্ব হয়ে যাবে যখন তারা নারী নেতৃত্ব মেনে নিবে।”

কেউ যদি এসকল হাদীস সরাসরি এর অর্থ নিয়ে আলোচনা করে তাহলে তা স্পষ্ট হয় যে নারী নেতৃত্ব ইসলামে হারাম।

এছাড়া হাদীসে বলা হয়েছে যে নারীদের কম জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।
তাই সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,ইসলামে নারী নেতৃত্ব সম্পূর্ণরুপে অবৈধ।

ইজমা ভিত্তিক দলীলঃ

কুরআন-হাদীস ছাড়াও ইজমাতে ইবনে হাযম মারাফিতুল ইজমা(পৃঃ১২৬) গ্রন্থে বলেছেন,
“তারা একথায় একমত হয়েছে নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”

ইমাম তাইমিয়া বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”
(নাকালু মারাফিয়া ইজমা).

অতঃপর আল্লামা মাওয়ার্দী যাকে ইসলামী রাজনীতির প্রবক্তা বলা হয়ে তিনি বলেন,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।
এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত হয়েছেন।”
(আহকামুস সুলতানিয়া)

আল্লামা আবুল ইয়ালা হাম্বলী তার এ আহকামুস সুলতানিয়া গ্রন্থে বলছেন,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”

ইমামুল হারামায় আল্লামা জুরাইন বলেছেন,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”

ইবনুল আরাবী বলছেন,
“নারী খলীফা কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারে না।”

ইমাম কুরতুবী এই ইজমা উল্লেখ করেছেন যে,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”

ইমাম গাযযালী(রঃ) খলীফা হওয়ার জন্য পুরুষ শর্ত উল্লেখ করেছেন।
আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী(রঃ) তার হুজ্জাতুল বালিগা তে বলেছেন,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।নেতৃত্ব হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।”

আল্লামা ইবনুল কাসীর বলেন,
“নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া ফরয।”

ইমাম কুরতুবী আহকামুল কুরআনে নারী নেতৃত্বকে নাজায়েয বলেছেন।
ইমাম যামাখখাশারী তার কাশশাফ এ লিখেছেন যে,
“নারী নেতৃত্ব হারাম।”
ইমাম বায়যভী তার তাফসীরে বায়যাভীতে বলেছেন যে,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”

ইমাম শাওকানী একই কথা বলেছেন।
ইমাম বদরুদ্দিন আইনী লিখেছেন যে, তা বৈধ নয়।

মোল্লা আলী কারী(রঃ) ফাতহুল বারীতে লিখেছেন যে, নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়।
আল্লামা মওদূদী ইসলামী শাসনতন্ত্রের ৮১ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
“রাজনীতি এবং দেশশাসনে নারীদের কর্মসীমার বহির্ভূত।”

আশরাফ আলী থানবী (রঃ) বলেন,
“নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”

সৌদি আরবের মুফতি আযম,আব্দুল্লাহ বিন বার,আযমীর নারী নেতৃত্ব নাজায়েয বলেছেন।

বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ ফাতওয়া শামীতে বলে হয়েছে,
“নারী নেতৃত্ব কোনভাবেই জায়েয নয়।কারণ আল্লাহ পাকের নির্দেশ হল নারীরা ঘরে পর্দার সাথে জীবন যাপন করবে।তাদের জন্য পর্দা করা ফরয।তাই কোনভাবেই তাদের জন্য নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়।”

অর্থাৎ, এখানে গোটা উম্মাতের ভিতর এই ইজমা সঙ্ঘটিত হয়েছে যে,নারী নেতৃত্ব ইসলামে মোটেও জায়েয নয়।

কিয়াস বা যুক্তির আলোকে নারী নেতৃত্বঃ

যারা নারী নেতৃত্বকে অবৈধ বলে থাকেন তারা এ ব্যাপারে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করে তা হল নিম্নরুপঃ

১. সফর করাঃ হাজ্জের সফরের জন্য কোন নারীর উপর যদি হাজ্জ ফরয হয় তাহলে সেই নারীর উপর ততক্ষণ পর্যন্ত হাজ্জ ফরয হবে না যতক্ষণ না তার সাথে কোন মাহরাম না থাকে।
একাকী ভ্রমণ করা তার জন্য নিষিদ্ব।
যদি সে একাকী সফর না করতে পারে তাহলে কি করে তার উপর নেতৃত্ব জায়েয হয়।
কারণ তাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অনেক সময় দূরে যেতে হবে।

২. জিহাদে অংশগ্রহণ তারপর জিহাদ নারীর জন্য ফরয নয়।
এখন যদি সে বলে জিহাদ তো আমার উপর ফরয নয় তোমরা জিহাদের ময়দানে যাও আর আমি বসে থাকি এ কথা বললে কিন্তু হবে না।

৩. ইমামতি করা জুম্মার নামায নারীর উপর ফরয নয়।আদায় করলে তা করতে পারে।
তাদের জন্য তো ইমামতি করা একেবারে নাজায়েয একটি কাজ।
আর ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের এটি একটি প্রধান দায়িত্ব যে, তারা জুম্মার নামায পড়াবে।

৪. ঐতিহাসিক চিন্তা-ধারাঃ তারপর আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, মুহাম্মদ(সাঃ) এর ওফাতের পর খুলাফায়ে রাশেদীন যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন কোন নারী খলীফা হন নাই,তারপর উমাইয়্যাদের দীর্ঘ ৯০ বছর,আব্বসীয়দের ৫৫০ বছরের শাসনের ইতিহাসে কখনও কোন নারী নেতৃত্ব দেয় নাই, স্পেনে উমায়্যাগণ প্রায় ৭০০ বছর শাসন করেছে সেসময় কোন নারী নেতৃত্ব দেয় নাই,উসমানীয়গণ প্রায় ৭০০ বছর শাসন করেছে তাদের ভিতর থেকে কখনও নারী নেতৃত্ব দেওয়া হয় নাই।
তাহলে কুরআন,হাদীস,ইজমা,কিয়াস এবং ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে,ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম।

৫. নবূয়াত প্রদানঃ আল্লাহ পাক এ পর্যন্ত কোন নারীকে যেখানে নবী করেন নাই সেখানে কি করে একজন নারী নেতৃত্ব দিতে পারে?
এই আলোকে ওলামাগণ নারী নেতৃত্বকে হারাম ঘোষণা করেছেন।

৬. নবীদের স্ত্রীদের নেতৃত্ব না নেওয়াঃ অনেকে এই যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, রাসূল(সাঃ) এর ইন্তকালের পর তার স্ত্রীগণ নেতৃত্ব নেন নাই।
খুলাফায়ে রাশেদীনের ভিতর কোন নারী ছিলেন না।তাহলে কি করে একজন নারী এখন নেতৃত্ব দিতে পারে?

৭. প্রকৃতিগত কারণঃ মেয়েরা প্রায় সময় হায়েয,নিফাস,ঋতুবতী হওয়ার দরুন তারা তাদের তাদের কার্যক্রমসমুহ যথাযথভাবে পালন করতে পারবে না বলে ইসলামে নারী নেতৃত্ব কোন অবস্থাতে জায়েয হতে পারে না।

৮. বেপর্দা হওয়াঃ যদি কোন নারী রাজ্যের অধিপতি হয় তাহলে তাকে প্রচার মাধ্যমসমূহতে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে তাকে নানা লোকের সাথে করমর্দন করতে হবে যা ইসলামী পর্দা জীবনের সম্পূর্ণরুপে পরিপন্থি।

সুতরাং নারী নেতৃত্ব সম্পূর্ণ হারাম।

__________________________________________________

কেউ কেউ বলেন নারী নেতৃত্ব জায়েজ আছে।
কিভাবে?
তারা বলেছেন,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার”।
হুজুরাতঃ১৩।
অনেকে বলে, নারীরা যদি পরিচিত হতে চায়,তো নেতৃত্ব দিতে পারবে।
কিন্ত আমি বলি,যে, পরে পরহেজগার এর কথা বলা হয়েছে।
যদি নেতৃত্ব দিতে যায়,তো পরহেজগার থাকতে পারবে না।

আবার কুরআনে বলা হয়েছে,
“যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত”।
নহলঃ৯৭।

অর্থাৎ সম্মানের মাপকাঠি হল জ্ঞান-তাকওয়ার দ্বারা।
অর্থাৎ যেই নারীর ভিতর তাকওয়া এবং জ্ঞান থাকে সেই নারীর নেতৃত্ব দিতে কোন বাধা থাকতে পারে না।

কিন্তু একজন নারী কিভাবে তার পরিপূর্ণ তাকওয়া নিয়ে নেতৃত্ব দিতে পারেন?
সম্ভব না।
তার কথা উপরে বলা হয়েছে।

আবার বলতে গেলে,
আল্লাহ নারী-পুরুষ উভয়কে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তাকে কোথাও চুপচাপ থাকতে বলা হয় নাই।
আল্লাহ বলেন,
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক।
তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে।
নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে।”
তওবাঃ৭১।

আল্লাহ নারী-পুরুষ উভয়কে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেছেন।
কিন্তু নেতৃত্ব দেবে পুরুষ,নারীরা পর্দার আড়াল থেকে শুধু সাহায্য করবে,এভাবেই তারা প্রতিষ্ঠা করবে ইসলাম।
নেতৃত দেওয়ার কথা বলা যাবে না।

তবে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় পুরুষেরা নারীর থেকে পরামর্শ নিতে পারবে।
নবী করীম (সঃ) যেমনটা করেরে গেছেন।

১. হুদায়বিয়ার সন্ধি যখন মুহাম্মদ(সাঃ)এর সাথে কাফিরদের ভিতর সম্পাদিত হয়েছিল তখন তা অনেকে মেনে নিতে পারে নাই।
তারা সেই বছরেরে জন্য সে স্থানে ত্যাগ করতে দ্বিধাগ্রস্থ ছিল।তারা কেউ কুরবানী করে নাই।
এ অবস্থায় রাসূল(সাঃ) কি করবেন তা কিছুই বুঝতে পারলেন না।
তখন তারই স্ত্রী উম্মে সালমা(রাঃ) তাকে যে পরামর্শ দিলেন সেই মোতাবেক তিনি সবার আগে মাথা মূন্ডন করলেন এবং কুরবানী দিলেন।
তারই দেখাদেখি সকলে তার এই কাজকে করলেন।
অর্থাৎ,বিশৃংখলা দূর করার ক্ষেত্রে উম্মে সালমা(রাঃ) এর এক বিশেষ অবদান ছিল।
এখানে নেতৃত্ব দিলেন মুহাম্মদ (সঃ) কিন্তু তাকে পরামর্শ উম্মে সালমা(রাঃ)।

২.নবী করিম (সাঃ) বিভিন্ন কাজের সময় মহিলা সাহাবাদের পরামর্শ গ্রহণ কতেন।
এ ব্যাপারে হাসান বসরী(রঃ) বলেন,
“মুহাম্মদ (সাঃ) মেয়েদের সাথেও পরামর্শ করতেন এবং কখনও কখনও তাদের মতামত গ্রহণ করতেন।”

সুতরাং বলা যায় যে, নারী নেতৃত্ব হারাম।
কিন্তু নারীরা পুরুষের নেতৃত্বে পরামর্শ দিতে পারবে।
তবে তা হতে হবে পর্দার মধ্যে।

বি.দ্রঃ বিভিন্ন মতামত থেকে গ্রহন করে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে।

I BUILT MY SITE FOR FREE USING