বাগেরহাটের মংলা ও রামপালে গ্রাহকদের গচ্ছিত ও সঞ্চয়ের তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামের একটি এনজিও। এ দুই উপজেলার রূপালী ও জনতা ব্যাংকের শাখা থেকে গোপনে এ টাকা তুলে আত্মগোপন করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খবিরুজ্জামান ও পরিচালক সরোয়ার হুসাইন। গচ্ছিত ও সঞ্চয়ের এই টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন গ্রাহকেরা। অপরদিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় মাঠকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামপাল উপজেলায় ২০০৪ সালে এবং মংলা উপজেলায় ২০১১ সালে ছয়টি শাখায় চলন্তিকা যুব সোসাইটির কার্যক্রম শুরু হয়। এ দুই উপজেলায় মাসিক বেতন ও কমিশন ভিত্তিতে চারজন কর্মকর্তা ৩১ জন মাঠকর্মীর মাধ্যমে সহস্রাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সঞ্চয় সংগ্রহে লেগে পড়েন। এর মধ্যে মংলা উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন শাখায় ৪৮০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে এফডিআর, মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক সঞ্চয়ের মাধ্যমে টাকা জমা করার জন্য সোসাইটির চেয়ারম্যান খবিরউজ্জামান ও পরিচালক সরোয়ার হোসাইনের নামে রূপালী ব্যাংক মংলা শাখায় যৌথ হিসাব খোলা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সংগৃহীত সঞ্চয়ের টাকা ওই হিসাবে জমা রাখা হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের মংলা শাখায় চলন্তিকা যুব সোসাইটির গ্রাহকদের ৭২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭০ টাকা জমা হয়। আর ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মাঠ থেকে ১৪ লাখ টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করে গ্রাহকদের মাধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে গত এপ্রিলে স্থানীয় মাঠ কর্মকর্তা ও কর্মীরা ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকে গেলে জানতে পারেন, সোসাইটির চেয়ারম্যান খবিরউজ্জামান ও পরিচালক সরোয়ার হোসাইন জমাকৃত টাকা তুলে নিয়েছেন। আর ওই হিসাব নম্বরে মাত্র ১০ হাজার ৪০৫ টাকা জমা আছে। একইভাবে রামপালের আরো তিনটি শাখায় গচ্ছিত ও সঞ্চয়ের প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা গোপনে তুলে নেয়া হয়। গ্রহকদের গচ্ছিত ও সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে নানা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে গ্রহকদের মধ্যে। এক পর্যায় এনজিওটির চেয়ারম্যান ও পরিচালকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন স্থানীয় শাখার কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা । এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে গত ১২ এপ্রিল চলন্তিকা যুব সোসাইটির মংলা শাখার সহকারী ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহাজালাল মংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। একই সাথে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের দফতরে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয় এবং গ্রাহকদের টাকা উদ্ধার করার জন্য ২৪ এপ্রিল বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেয়ারম্যান ও পরিচালকের নামে একটি মামলা করা হয়।
এ বিষয় সংস্থাটির মাঠকর্মী মুসলিমা বেগম জানান, সঞ্চিত টাকা ফেরত পেতে তার পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস দিনমজুর স্বামীর নছিমন কেড়ে নিয়েছেন গ্রহকেরা। আর গ্রহকদের চাপের মুখে তার স্বামী এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। মাঠকর্মী ওমর সানি জানান, তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি গচ্ছিত টাকার বদলে কেড়ে নিয়েছেন গ্রাহকেরা। মাঠকর্মী ফাতেমা বেগম ও খাদিজা বেগম বলেন, নিয়োগপত্র অনুযায়ী আমাদের চাকরির মেয়াদের দুই বছর পার হওয়ার পর ২০১৫ সালে এনজিও চেয়ারম্যান ও পরিচালক অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে আমাদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। এক পর্যায় চাকরির সিকিউরিটির জন্য ১৫০ টাকার সাদা স্টাম্প ও ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এখনো পর্যন্ত ওই স্টাম্প ও ব্লাঙ্ক চেক ফেরত দেননি।