পীর-মুরীদ, মাজার-ওরস,মারেফত তরিকত,
তাসাউফ সম্পর্কে ইসলামি দিকনির্দেশনা বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
লেখক:- মাওলানা সাইফুদ্দিন মানিক
কুরআন ও হাদীসের আলোকে পীর ও মাজার ও মারেফত ও পীর মুরীদী প্রসঙ্গে জরুরী জ্ঞাতব্য
༺ بِسْـــــــــــــــــــــــمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم ༻
আসসালামু আলাইকুম ওরহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু
Press "Like" & "Comments" & "Share"
পীর-মুরীদ কাকে বলে?
পীর শব্দটি ফার্সি। আরবীতে বলা হয় মুরশীদ। মুরশীদ শব্দের অর্থ হল পথপ্রদর্শক। যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার প্রশিক্ষণ দেন তার নাম মুরশীদ বা পথপ্রদর্শক। যাকে ফার্সীতে বলে পীর।
“মুরীদ” শব্দটিও আরবী। যার অর্থ হল ইচ্ছাপোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির হাত ধরে শপথ করে, সে ব্যক্তির নাম হল “মুরীদ”।
এ ব্যাখ্যা থেকে একথা স্পষ্ট হল যে, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল “মুরীদ”।
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের বিধান মানে না, নামায পড়ে না, পর্দা করে না, সতর ঢেকে রাখে না বা শরীয়তের আবশ্যকীয় কোন বিধান পালন করে না, সে ব্যক্তি কিছুতেই পীর তথা মুর্শীদ হতে পারে না। কারণ তার নিজের মাঝেই যখন শরীয়ত নেই, সে কিভাবে অন্যকে শরীয়তের উপর আমল করা প্রশিক্ষণ দিবে? নিজেইতো প্রশিক্ষিত নয়।
আর পীর মুরীদির এ পদ্ধতি রাসূল সাঃ থেকে চলে আসছে। রাসূল সাঃ সাহাবাদের আল্লাহমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতেন। সাহাবারা রাসূল সাঃ এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন। বলা যায় রাসূল সাঃ হলেন সবচে’ প্রথম ও বড় পীর, ও সাহাবায়ে কিরাম হলেন প্রথম মুরীদ।
#কুরআন_হাদীসে_পীর_মুরিদীর_প্রমাণ
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119
অনুবাদ-হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। {সূরা তাওবা-১১৯)
এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
অনুবাদ-আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ। {সূরা ফাতিহা-৬,৭}
সূরায়ে ফাতিয়ায় মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর নিয়ামাতপ্রাপ্ত বান্দারা যে পথে চলেছেন সেটাকে সাব্যস্ত করেছেন সীরাতে মুস্তাকিম।
আর তার নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা হলেন-
الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ
অনুবাদ-যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ। {সূরা নিসা-৬৯}
এ দু’ আয়াত একথাই প্রমাণ করছে যে, নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা হলেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, আর নেককারগণ, আর তাদের পথই সরল সঠিক তথা সীরাতে মুস্তাকিম। অর্থাৎ তাদের অনুসরণ করলেই সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলা হয়ে যাবে।
যেহেতু আমরা নবী দেখিনি, দেখিনি সিদ্দীকগণও, দেখিনি শহীদদের। তাই আমাদের সাধারণ মানুষদের কুরআন সুন্নাহ থেকে বের করে সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলার চেয়ে একজন পূর্ণ শরীয়তপন্থী হক্কানী বুযুর্গের অনুসরণ করার দ্বারা সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলাটা হবে সবচে’ সহজ। আর একজন শরীয়ত সম্পর্কে প্রাজ্ঞ আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তির সাহচর্য করার নামই হল পীর মুরিদী।
রাসূলে কারীম সাঃ একাধিক স্থানে নেককার ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমন-
عن أبي موسى رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( مثل الجليس الصالح والسوء كحامل المسك ونافخ الكير فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحا طيبة ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك وإما أن تجد ريحا خبيثة
অনুবাদ-হযরত আবু মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-সৎসঙ্গ আর অসৎ সঙ্গের উদাহরণ হচ্ছে মেশক বহনকারী আর আগুনের পাত্রে ফুঁকদানকারীর মত। মেশক বহনকারী হয় তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তুমি নিজে কিছু খরীদ করবে। আর যে ব্যক্তি আগুনের পাত্রে ফুঁক দেয় সে হয়তো তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে, অথবা ধোঁয়ার গন্ধ ছাড়া তুমি আর কিছুই পাবে না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫২১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৮৬০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩১৯০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬১, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪২৯৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৬৬০, মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৭৭০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২৬২২, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৩৭৭, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৫১৫}
এছাড়াও অনেক হাদীস নেককার ও বুযুর্গ ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণের প্রতি তাগিদ বহন করে। আর সবচে’ বড় কথা হল-বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই দ্বীন বিমুখ। যারাও দ্বীনমুখী, তাদের অধিকাংশই কুরআন হাদীসের আরবী ইবারতই সঠিকভাবে পড়তে জানে না, এর অর্থ জানবেতো দূরে থাক। আর যারাও বাংলা বা অনুবাদ পড়ে বুঝে, তাদের অধিকাংশই আয়াত বা হাদীসের পূর্বাপর হুকুম, বা এ বিধানের প্রেক্ষাপট, বিধানটি কোন সময়ের জন্য, কাদের জন্য ইত্যাদী বিষয়ে সম্যক অবহিত হতে পারে না। তাই বর্তমান সময়ে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে নিজে বের করে আল্লাহ তাআলার উদ্দিষ্ট সীরাতে মুস্তাকিমে চলা বান্দার জন্য কষ্টসাধ্য। তাই আল্লাহ তাআলা সহজ পথ বাতলে দিলেন একজন বুযুর্গের পথ অনুসরণ করবে, তো সীরাতে মুস্তাকিমেরই অনুসরণ হয়ে যাবে।
কিন্তু কথা হচ্ছে যার অনুসরণ করা হবে সে অবশ্যই সীরাতে মুস্তাকিমের পথিক হতে হবে। অর্থাৎ লোকটি {মুরশীদ বা পীর} এর মাঝে থাকতে হবে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ। বাহ্যিক গোনাহ থেকে হতে হবে মুক্ত। কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে হতে হবে প্রাজ্ঞ। রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের উপর হতে হবে অবিচল। এমন গুনের অধিকারী কোন ব্যক্তি যদি পাওয়া যায়, তাহলে তার কাছে গিয়ে তার কথা মত দ্বীনে শরীয়ত মানার নামই হল পীর মুরিদী। এরই নির্দেশ আল্লাহ তাআলা কুরআনে দিয়েছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119
অনুবাদ-হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। {সূরা তাওবা-১১৯)
বিঃদ্রঃ আখেরাতে নাজাত পাওয়ার জন্য মুরীদ হওয়া জরুরী নয়। তবে একজন হক্কানী পীরের কাছে মুরীদ হলে শরীয়তের বিধান পালন ও নিষিদ্ধ বিষয় ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ঠা আসে মুরুব্বীর কাছে জবাবদিহিতা থাকার দরুন। সেই সাথে আল্লাহর ভয়, ইবাদতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে বেদআতি, ভন্ড, মাজারপূজারী, বেপর্দা পীরের কাছে মুরিদ হলে ঈমানহারা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে আটরশী, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, মাইজভান্ডারী, রাজারবাগী, ফুলতলী, মানিকগঞ্জী, কেল্লাবাবা ইত্যাদী পীর সাহেবের দরবারে গেলে ঈমানহারা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সাবধান পীর নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
প্রসঙ্গ #মাযার
“মাযার” শব্দটি আরবী। বাংলা অর্থ হল যিয়ারতের স্থান। যে স্থানকে যিয়ারত করা হয়, তার নামই মাযার। মুসলমানের কবর যিয়ারত করা জায়েজ। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
عن ابن بريدة عن أبيه قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فإن فى زيارتها تذكرة
অনুবাদ-হযরত ইবনে বুরাইদা রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলা, এখন যিয়ারত কর। [কোন সমস্যা নেই।]। কেননা কবর যিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করে দেয়। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৭০০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩০৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৫৭১, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬৯}
কবর যিয়ারত করা ছাড়া কবর তথা মাযার ঘিরে আরো যত কাজ করা হয়, তা সবই বিদআত। এসব করা জায়েজ নেই। যেমন-
১-মাযার ঘিরে উরস করা।
২-মাযারে বাতি প্রজ্বলন করা
২-মাযারে মান্নত মানা।
৩-মাযারে গিয়ে দুআ করা। মৃত ব্যক্তির কাছে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে দেওয়ার আবেদন করা।
৪-মাযারে শিন্নি পাকানো ইত্যাদী সকল কাজই বিদআত ও শরীয়ত গর্হিত কাজ। এসব করা খুবই গোনাহের কাজ। এসবের কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। সম্পূর্ণ হারাম এ সকল কাজ।
#মাযার_ঘিরে_উরস_করা
স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর নবী ইরশাদ করেন-
عن أبى هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « لا تجعلوا بيوتكم قبورا ولا تجعلوا قبرى عيدا وصلوا على فإن صلاتكم تبلغنى حيث كنتم (سنن ابى داود-كتاب المناسك، باب زيارة القبور، رقم الحديث-2044
“তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়োনা। (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন করনা।) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন করনা। তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন।)” (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূলে সাঃ নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ করেছেন। তাহলে অন্য কে আর এমন আছে যার কবরে তা বৈধ হবে?
হাদিসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী রহঃ এই হাদিসের ব্যাক্ষা করতে গিয়ে বলেন-
قال المناوي ويؤخذ منه أن اجتماع العامة في بعض أضرحة الأولياء في يوم أو شهر مخصوص من السنة ويقولون هذا يوم مولد الشيخ ويأكلون ويشربون وربما يرقصون فيه منهي عنه شرعا وعلى ولي الشرع ردعهم على ذلك وإنكاره عليهم وإبطاله (عون المعبود-كتاب المناسك باب زيارة القبور-6/23)
“এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে (উরসের নামে) ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে-আজ পীর সাহেবের জন্ম বার্ষিকী (মৃত্যু বার্ষিকী), সেখানে তারা পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এ সব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী। (আউনুল মা’বুদ-৬/২৩)
#মাযার_ঘিরে_বাতি_প্রজ্বলন_হারাম
عن ابن عباس قال : لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج (سنن الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ، باب ما جاء في كراهية أن يتخذ على القبر مسجدا-2/136)
“হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী সাঃ অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায়(কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে। (জামি তিরমীযী-২/১৩৬)
উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী সাঃ।
#মাযারে_মান্নত_করা_হারাম
আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায়না। কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা জন্য করা জায়েজ নয়। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (163) (سورة الأنعام-162-163)
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা আনআম-১৬২-১৬৩)
সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (২)( অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। (সূরা কাউসার-২)
প্রশ্নঃ ১.মারেফাত কি? মারেফাতে বিশ্বাস রাখা কি জায়েয?
উত্তর:
#১ম_প্রশ্নের_জবাব: মারেফত শব্দটি আরবী। যার অর্থ হল, পরিচয়। মৌলিকভাবে মারেফতের পরিচয় তাই, যা হাদীসে জিবরাঈলে “ইহসান” এর পরিচয়ে উদ্ধৃত। তথা-
যখন হযরত জিবরাঈল আঃ রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করেন,
قَالَ: فَمَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ: ” أَنْ تَعْمَلَ لِلَّهِ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ”
“ইহসান কি?” তখন রাসূল সাঃ জবাবে বলেন, তুমি রবের ইবাদত এভাবে কর যে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখ, যদি তাকে দেখতে না পাও, তাহলে অন্তত তিনিতো তোমাকে দেখছেন”। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৭, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮}
আল্লাহ তাআলার এতটুকু নৈকট্য অর্জন করা যে, যেন আল্লাহকে দেখার মত ভয়, মোহাব্বত মনে জাগরুক হয়, কিংবা অন্তত ইবাদতের সময় আল্লাহ দেখছেন এমন ভয় ও মোহাব্বত আল্লাহর প্রতি সৃষ্টির নামই মারেফত বা আল্লাহর পরিচয় লাভ।
এই মারেফাতে বিশ্বাস রাখার কথা হাদীসেই উদ্ধৃত। সুতরাং এটি নাজায়েজ হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না।
কিন্তু কথা হল, তথাকথিত মারেফাতের ব্যাপারে। যারা শরীয়তের বিধান লঙ্ঘণ করে, ইবাদত না করে বাতেনী ইবাদতকে মারেফাত বলে মিথ্যাচার করে বেড়ায় সেসব ব্যক্তিদের কথিত মারেফতকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বস্তু মনে করা হারাম।
ভন্ড পীর ফকীরদের মারেফত আসলে মারেফত নয়, জাহান্নামে যাওয়ার পথ। যে ব্যক্তির নিজের মাঝেই আল্লাহ তাআলার বিধান ও রাসূল সাঃ এর সুন্নত নেই, উক্ত ব্যক্তি কি করে অন্য ব্যক্তিদের আল্লাহ তাআলার সাথে মারেফত বা পরিচয় করিয়ে দিবে? সেতো নিজেই আল্লাহ তাআলাকে চিনে না।
তাই শরীয়তের বিধান লঙ্ঘণকারী কথিত মারেফতীদের বিশ্বাস করা জায়েজ নেই।
২. পীর-ফকির মানা যাবে কি? বাংলাদেশের বর্তমান হক্বানী পীর কেউ আছেন কি?
#২নং_এর_জবাব
পীর ফকীর বলতে আপনি কাদের বুঝাচ্ছেন? আপনার প্রশ্নটি আম প্রশ্ন। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, শিক্ষককে মানা যাবে কি না? যদি প্রশ্ন করা হয়, মুরুব্বীকে মানা যাবে কি না? যদি প্রশ্ন করা হয়, বড়দের মানা যাবে কি না?
আপনি কি জবাব দিবেন? মানা যাবে বলে দিবেন? না ব্যাখ্যা সাপেক্ষে বলবেন?
নিশ্চয় ব্যাখ্যা সাপেক্ষে বলবেন।
আপনার নিশ্চয় বলতে হবে যে, পরিমল দাসের মত লম্পট শিক্ষকদের কথা মানা যাবে না। সুশিক্ষিত, মার্জিত, উত্তম চরিত্রবান ও দুনিয়া-আখেরাতে কল্যাণকামী শিক্ষকের কথা মানা যাবে।
বিদআত ও শিরকে লিপ্ত, জাহান্নামের পথে আহবানকারী মুরুব্বীর কথা মানা যাবে না, হেদায়াতপ্রাপ্ত, বিদআতমুক্ত, জান্নাতের পথে আহবানকারী কল্যাণকামী মুরুব্বীর কথা মানা যাবে।
একই কথা প্রযোজ্য বড়দের ক্ষেত্রে। যদি তারা দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য কল্যাণের দিকে ডাকেন, তাহলে তাদের কথা মানা যাবে, আর যদি দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ক্ষতিকর হন, তাহলে তাদের কথা মানা যাবে না।
তেমনি একই কথা পীর মাশায়েখ সম্পর্কে। যদি পীর হক্কানী পীর হোন। যদি পীরের মাঝে শরীয়তের পরিপূর্ণ পাবন্দী থাকে। বিদআত, শিরক, কবরপূজা, মাজারপূজা, বাউল গান, বেপর্দা, গান-বাজনাসহ কুরআন ও হাদীস বিরোধী মতবাদ, রূসুমাত, রীতিনীতি মুক্ত থেকে আল্লাহ তাআলার বিধান ও রাসূল সাঃ এর সুন্নতের পরিপূর্ণ পাবন্দ হোন, তাহলে উক্ত পীর মাশায়েখকে মানতে কোন সমস্যা নেই।
তবে এক্ষেত্রেও ভক্তির নামে অতিরঞ্জন করা জায়েজ নয়।
পীরকে নাজাতের উসীলা মনে করা শিরক ও কুফরী।
পীর দুআ কবুল করতে পারে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফুরী।
পীর আখেরাতে পুলসিরাত পাড় করে দিবে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী।
পীর কবরে এসে ফেরেস্তার সওয়ালের জওয়াব দিয়ে দিবে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী।
আশরাফ আলী থানবী রহঃ পীর মুরীদির বিষয়ে পরিস্কার ভাষায় বলেছেন যে, পীরের কাছে বাইয়াত হওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ মুস্তাহাবের পর্যায়ে। কাজেই এটিকে কাজে-বিশ্বাসে অধিক মর্যাদা দেয়া, যেমন বাইআতকে নাজাতের শর্ত মনে করা অথবা বাইআত পরিত্যাগকারীকে তিরস্কার করা এ সবই বিদআত ও দ্বীনী বিষয়ে সীমালঙ্ঘণ ছাড়া কিছু নয়। {ইমদাদুল ফাতওয়া-৫/২৩৭-২৩৮}
পীরের কাছে বাইআত হতেই হবে, এছাড়া আখেরাতে মুক্তি নেই বিশ্বাস করা জায়েজ নেই। সুষ্পষ্ট গোমরাহীর নিদর্শন এমন বক্তব্য দেয়া।
বর্তমান বাংলাদেশে হক্কানী পীর মাশায়েখ যেমন আছেন। তেমনি পীরের নামে ভন্ড ও ঈমান বিধ্বংসী পীর ফকীরেরও অভাব নেই।
ভন্ড পীরদের মাঝে অন্যতম হল-
১- মাইজভান্ডারীর সকল পীর।
২- দেওয়ানবাগী।
৩- সুরেশ্বরী পীর।
৪- আটরশীর পীর।
৫- কুতুববাগী।
৬- রাজারবাগী।
৭- ফুলতলী।
৮- চন্দ্রপুরী।
৯- কেল্লাবাবা।
১০- মাজার ও উরসকেন্দ্রীক সকল পীরসহ আরো অনেকে।
১১- রেজভী নামধারী সকল পীর।
হক্কানী পীর মাশায়েখদের মাঝে রয়েছেন–
১- সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ এর খলীফাগণ।
২- হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর খলীফাগণ।
৩- সাইয়্যেদ আস’আদ মাদানী রহঃ এর খলীফাগণ।
৪- হাকীম আখতার রহঃ এর খলীফাগণ।
৫- হারদুই রহঃ এর খলীফাগণ।
৬- চরমোনাইয়ের পীর।
৭- মুফতী আহমদ শফী দা.বা.।
৮- মাওলানা আব্দুল মতীন দা.বা. ঢালকানগর মাদরাসা।
৯- মাওলানা ইদ্রিস শায়েখে সন্দিপী রহঃ এর খলীফাগণ।
১০- হাফেজ্জী হুজুর রহঃ এর খলীফাগণ।
১১- উজানীর পীর।
১২- মাওলানা আব্দুল হামীদ মধুপুর।
এছাড়া আরো অনেক পীর মাশায়েখ রয়েছেন আমাদের দেশে। যারা মাজারপূজা, কবরপূজা, পীরপূজা ও বাউলগান, গান-বাজনা করার শিক্ষা নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্বের দিকে আহবান করেন।
আপনার নিকটস্থ কোন কওমী মাদরাসার ফারিগ আলেম থেকে জেনে নিন আপনার জন্য উপকারী মুর্শীদ কে হতে পারে? তবে আগেই আমরা বলেছি আখেরাতে নাজাতের জন্য মুরীদ হওয়া শর্ত নয়। এমনটি মনে করা গোমরাহী।
আল্লাহর বিধান ও রাসূল সাঃ এর সুন্নতের অনুসরণই প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি। শুধু পীরের মুরীদ হওয়া নয়। মুরীদ হয়ে গোনাহ করলে যেমন জাহান্নামী হবে, তেমনি মুরীদ না হয়ে গোনাহ করলেও জাহান্নামী হতে হবে।
৩. চার ত্বরীকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই!
#৩নং_প্রশ্নের_জবাব
রাসূল সাঃ ছিলেন ইলম ও আমলের জামে তথা পূর্ণাঙ্গরূপ। সকল প্রকার ইলমের উৎসগিরি ছিলেন রাসূল সাঃ। কিন্তু তাঁর ইন্তেকালের পর সকল ইলমের পূর্ণতা এক ব্যক্তির মাঝে পাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সকল ইলমই মানুষের প্রয়োজন।
যেমন ইলমে কিরাআত। ইলমে ফিক্বহ। ইলমে হাদীস। ইলমে কুরআন। ইলমে আকায়েদ, ইলমে তাসাউফ ইত্যাদি।
যেহেতু উলামায়ে কেরাম হলেন রাসূল সাঃ এর ওয়ারিস। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা রাসূল সাঃ থেকে পাওয়া প্রয়োজনীয় সকল ইলমের ওয়ারাসাত লাভ করেন। কিন্তু একজনের কাছে সকল ইলম জমা ছিল না। একদল হয়ে পড়েন ইলমে কিরাত বিশেষজ্ঞ, আরেকদল ইলমে হাদীস বিশেষজ্ঞ। আরেকদল ইলমে ফিক্বহ বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি।
উপরোক্ত প্রয়োজনীয় বিষয়াদীতে সাধারণ মুসলমানদের উপর জরুরী হল সেসব বিজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণ করা। এসব বিজ্ঞ বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পথ-নির্দেশনা মেনে শরীয়তের অনুসরণ করা। যেহেতু সবাই সব বিষয়ে প্রাজ্ঞ হওয়া সম্ভব নয়, তাই যারা যে বিষয়ে অনভিজ্ঞ তারা গ্রহণযোগ্য অভিজ্ঞদের পথ-নির্দেশনা মেনে চলে আসছেন আবহমান কাল থেকে।
বিজ্ঞ উলামাদের অনুসরণের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহঃ লিখেন-
فَيَجِبُ عَلَى الْمُسْلِمِينَ -بَعْدَ مُوَالَاةِ اللَّهِ تعالى وَرَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- مُوَالَاةُ الْمُؤْمِنِينَ كَمَا نَطَقَ بِهِ الْقُرْآنُ. خُصُوصًا الْعُلَمَاءُ, الَّذِينَ هُمْ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ الَّذِينَ جَعَلَهُمْ اللَّهُ بِمَنْزِلَةِ النُّجُومِ, يُهْتَدَى بِهِمْ فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ . وَقَدْ أَجْمَعَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى هِدَايَتِهِمْ وَدِرَايَتِهِمْ.
إذْ كَلُّ أُمَّةٍ -قَبْلَ مَبْعَثِ نبيِّنا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فَعُلَمَاؤُهَا شِرَارُهَا, إلَّا الْمُسْلِمِينَ فَإِنَّ عُلَمَاءَهُمْ خِيَارُهُمْ؛ فَإِنَّهُمْ خُلَفَاءُ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أُمَّتِهِ, والمحيون لِمَا مَاتَ مِنْ سُنَّتِهِ. بِهِمْ قَامَ الْكِتَابُ, وَبِهِ قَامُوا, وَبِهِمْ نَطَقَ الْكِتَابُ وَبِهِ نَطَقُوا.
অনুবাদ- কুরআনে কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী মুসলমানদের উপর অপরিহার্য যে, তারা আল্লাহ তাআলা ও তদীয় রাসূল সাঃ এর মোহাব্বতের পর মুমীনদের সাথে মোহাব্বত ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখবে। বিশেষতঃ উলামায়ে কেরামের সাথে। যারা নবীগণের ওয়ারিস তথা উত্তরসূরী। আল্লাহ তাআলা যাদেরকে বানিয়েছেন নক্ষত্রতূল্য। যাদের মাধ্যমে জল ও স্থলের ঘোর অন্ধকারে মানুষ হেদায়াতের আলো লাভ করে। যাদের ব্যাপারে মুসলমানরা একমত যে, তারা রয়েছেন জ্ঞান ও হেদায়াতের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত।
পক্ষান্তরে রাসূল সাঃ এর আবির্ভাবের পূর্বে সকল উম্মতের মাঝে নিকৃষ্ট সম্প্রদায় হত উলামা সম্প্রদায়। একমাত্র মুসলিম জাতিই এর বিপরীত। তাদের মাঝে সর্বোত্তম হলেন এই উলামায়ে কেরাম। কেননা, তারা রাসূল সাঃ এর প্রতিনিধি। তার মৃত সুন্নতের জীবনদানকারী। তাদের দ্বারা কুরআন সুপ্রতিষ্ঠিত ও কুরআন দ্বারা তারা সুপ্রতিষ্ঠিত। কুরআন তাদের কথা বলে, আর তারা কুরআনে কারীমের কথা বলেন। {রাফউল মালাম আনিল আইম্মাতিল আলাম-৮, ভূমিকা}
রাসূল সাঃ এর এসব উত্তরসূরীদের মাঝে আল্লাহ তাআলা কথককে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রসিদ্ধি দান করেছেন। যেমন তিলাওয়াত ও কেরাআত শাস্ত্রে কুররায়ে সাবআ তথা সাত কারী।
আকাইদ শাস্ত্রে ইমাম তাহাবী রহঃ, ইমাম আবূ মানসূর মাতুরীদী রহঃ ও ইমাম আবুল হাসান আশআরী রহঃ।
ফিক্বহ ও ফাতওয়া বিষয়ে চার ইমাম তথা ইমাম আবূ হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম মালিক রহঃ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ।
তেমনি তাসাউফ তথা পীর মুরীদি বিষয়ে চার হক্কানী পীর মাশায়েখকে খ্যাতি দান করেছেন।
তাসাউফের প্রসিদ্ধ চার তরীকা কাদের দিকে নিসবত করা?
তাসাউফের অনেক সিলসিলা রয়েছে। কিন্তু এর মাঝে সবচে’ প্রসিদ্ধ হল চারটি। যথা-
১- কাদেরিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ এর দিকে নিসবত করে বলা হয়। [৪৭০-৫৬১হি]
২- চিশতিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ মুঈনুদ্দীন চিশতী রহঃ এর দিকে নিসবত করা। [৫২৭-৬৩৩হিঃ]
৩- সোহরাওয়ারদিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহঃ এর দিকে নিসবত করে বলা হয়। [৫৩৯-৬৩২]
৪- নকশবন্দিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী রহঃ এর দিকে নিসবত করা। [৭১৮-৭৯১}
এ চার সিলসিলা হাদীসের সনদের মতই তাদের শায়েখ হয়ে হয়ে তাবে তাবেয়ী, তারপর তাবেয়ী, তারপর সাহাবী তারপর অবশেষে রাসূল সাঃ পর্যন্ত গিয়ে মিলেছে।
এ চার তরীকার শায়েখদের ইলমী ও আমলী হালাত ছিল সর্বজনবিদিত। ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের দিয়েছিলেন ব্যাপক পরিচিত ও প্রসিদ্ধি। তাই পরবর্তী বুজুর্গানে দ্বীন নিজেদের নিসবত তাদের দিকে করা শুরু করে দেন। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে এ চার তরীকা।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ নূরানী সিলসিলার দিকে অনেক ভন্ড ও বিদআতি ও শিরকী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত কথিত পীররাও নিসবত করে থাকে। তাই শুধু সিলসিলার নিসবত দেখেই তাদেরকে হক বলা শুরু করা হবে বোকামী।
পীর ভাল না খারাপ তা মাপার মাপকাঠি শুধু সিলসিলার নিসবত নয়, বরং ইলম, আমল, তাকওয়া, ইখলাস, কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ-অনুকরণ, এক কথায় শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসরণের ভিত্তিতে পীর সাহেবেকে যাচাই করতে হবে।
উক্ত মাপকাঠিতে যদি উক্ত পীর উত্তীর্ণ হন, তাহলে তিনি প্রকৃত পীর। নতুবা ভন্ড। ঈমান বিধ্বংসী শয়তানের দোসর।
#চার_তরীকা_কি_ইসলামকে_বিভক্তকারী_চার_পথ?
অনেক আলেম নামধারী ভাইকেও আজকাল দেখা যায় যে, একটি হাস্যকর বিষয়ের অবতারণা করে থাকেন। তাদের বক্তব্য হল চার তরীকা মানে হল চার পথ। যে পথের কোনটিতেই ইসলাম নেই। সঠিক পথ হল শুধুই ইসলাম।
হাস্যকর বক্তব্য। উক্ত ভাই হয়তো না বুঝার কারনে কিংবা বুঝেও ইলম ও আমলের রূহানিয়্যাত থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে এমন বোকামীসূলভ বক্তব্য প্রদান করে থাকেন।
আমরা যদি উক্ত ভাইকে প্রশ্ন করি-
১। কুরআনের সাত কিরাত কি ইসলামের সাত পথ? একটিতে নাজাত আর বাকিগুলোতে ধ্বংস? [নাউজুবিল্লাহ]
নাকি এর প্রতিটি কিরাতের দ্বারাই পূর্ণাঙ্গ কুরআন পাওয়া যায়?
নিশ্চয় এর জবাব হল, কুরআন সাত কিরাতে নাজিল হলেও, এক কিরাতে পড়লেও সেটি পূর্ণাঙ্গ কুরআনকেই বুঝায়। তেমনি চার তরীকার মূল টার্গেট একই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ নিষেধ, রাসূল সাঃ এর আদেশ নিষেধ মোহাব্বত নিয়ে পালন করার মানসিকতা তৈরী করা।
২। দ্বীনী ইলম শিখার বর্তমানে দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি হল একাডেমিক পদ্ধতিতে দ্বীন শিখা। যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত পদ্ধতি নয়। আরেকটি হল কোন আলেমের কাছে থেকে জ্ঞান শিক্ষা করা। যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত পদ্ধতি।
এখন প্রশ্ন হল দ্বীন শিখার উপরোক্ত দুই পদ্ধতির একটি ইসলাম, আরেকটি গোমরাহী? এমন আহমকী কথা কি কেউ বলবেন?
নাকি উভয়টি দ্বারাই উদ্দেশ্য একটি। যা হল দ্বীনের ইলম শিক্ষা করা।
একাডেমিক পদ্ধতিটি কেবল দ্বীন শিখার সহায়ক হিসেবে আবিস্কৃত হয়েছে। এটি সুন্নত বা সওয়াবের কাজ একথা কেউ বলে না।
তেমনি তাসাউওফের ৪ তরীকা কোন সুন্নত নয়। নয় এটি আবশ্যকীয় বিষয়। বরং রাসূল সাঃ এর আনীত দ্বীন নিজের অভ্যাসে পরিণত করার জন্য, শরীয়তের বিধানগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করার জন্য একটি সহায়ক পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু নয়।
পীর দেখেই তার পিছনে যেমন ছুটতে শুরু করা যাবে না। আগে যাচাই করে নিতে হবে তিনি ভাল মানুষ না ধোঁকাবাজ। তিনি আল্লাহ ও রাসূলের আশেক না শয়তানের দোসর। এ কারণে সকল পীরকে যেমন মন্দ বলা গোঁড়ামী, তেমনি পীর শুনেই ভক্তি করতে চাওয়া আহমকী ও গোমরাহীর নিদর্শন।
সূত্র- http://ahlehaqmedia.com/63-2/
2. কুরআন ও হাদীস থাকতে পীর ধরতে হয় কেন?
http://ahlehaqmedia.com/5942/
3. পীর মাশায়েখ ও মাযহাব অনুসারীদের প্রতি আহলে হাদীস লামাযহাবী শায়েখদের বিদ্বেষের ভয়াবহ চিত্র!
https://www.youtube.com/watch?v=bt5-EV5jJU0 <><>
4. "কাশফ" সম্পর্কে মতিউর রহমান মাদানীর বিভ্রান্তির জবাব! By Mufty Lutfor Rahman Farazi <><> https://www.youtube.com/watch?v=YgCU3fRVkbs <><>
5. সুরেশ্বরী পীরের মাজার ও উরসে গমণ ও তাদের মুরীদ হওয়া হারাম
http://ahlehaqmedia.com/4781-2/ <><>
6. মাজারে মৃত বা জীবিত পীর ও মুর্শীদের নামে মান্নত করার হুকুম কী?
http://ahlehaqmedia.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%…/
7. মাজার বা পীরকে সেজদা করার হুকুম কী?
http://ahlehaqmedia.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%…/
8. ইসলামের দৃষ্টিতে পীর মুরীদী Pir Muridi On Islam By Maolana Hasan Jamil
https://www.youtube.com/watch?v=OYqJdsDQ0eU <><>
9. পীর মুরীদী এবং মাজার ওরস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
http://ahlehaqmedia.com/64-2/
10. চরমোনাই পীর কি হকপন্থী?
http://ahlehaqmedia.com/66-2/
11. আল্লাহু হাজিরী ও আল্লাহু নাজিরী শব্দের জিকির প্রসঙ্গে
http://ahlehaqmedia.com/5312/
12. এছহাক রহঃ এর ভেদে মারেফত বইয়ের একটি কথার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে
http://ahlehaqmedia.com/5209/
13. চরমোনাই তরীকা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব
http://ahlehaqmedia.com/4958-3/
14. কাপড় ধরে বাইয়াত করানোর হুকুম কী?
http://ahlehaqmedia.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%…/
15. বেরেলবী বিদআতিদের শয়তানের প্রতি মোহাব্বতের চিত্র [১ম পর্ব]
http://ahlehaqmedia.com/6015-2/
16. তাকওয়া হাসিলের উপায়
http://ahlehaqmedia.com/%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%…/
17. আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য মুরীদ হওয়া আবশ্যক?
http://ahlehaqmedia.com/%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%…/
18. দরূদে হাজারী নামে কোন দরূদের কোন অস্তিত্ব আছে কি?
http://ahlehaqmedia.com/%e0%a6%a6%e0%a6%b0%e0%a7%82%e0%a6%…/
19. চরমোনাই মাহফিলে মুরীদরা লাফালাফি করে কেন?
http://ahlehaqmedia.com/62-2/
20. বর্তমান মাযার ও কবর পূজা এবং মুর্তিপূজা সাদৃশ্যতাঃ ভন্ড মাযারপন্থীদের মুখোশ উন্মোচন
http://ahlehaqmedia.com/6200-2/
আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীন পালনের নামে বদ্বীনী কাজ করা থেকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।